গুহা, খুঁজে পাওয়া একটি দাঁত ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য!

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের ওয়েমেহ গুহায় প্রত্নতত্ত্ববিদরা একটি শিশুর দাঁত খুঁজে পেয়েছিলেন। সেইসঙ্গে কিছু মানুষের হাড়-কঙ্কালও। ২০ বছর ধরে গবেষণা ও বিশ্লেষণের পর সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, উদ্ধার করা মানুষের ডিএনএতে মিলেছে নিয়ানডার্থালের অস্তিত্ব।

সম্প্রতি জার্নাল অব হিউম্যান এভালুশনে এ নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ছোট একটি দাঁতের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।

গবেষণায়, বিভিন্ন পাহাড়ি গুহা থেকে প্রাপ্ত কয়েক দশকের পুরনো আবিষ্কারগুলো বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা। এতে উন্মোচিত হয়, নিয়ানডার্থাল একসময় আধুনিক ইরানেও ঘুরে বেড়াত। তাদের মোটা-ভুরুর এই স্বজনরা বিপুল অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।

১৯৯৯ সালে ইরানের ওয়েমেহ গুহায় খুঁজে পাওয়া শিশুর দাঁতটি নিয়ে ২০ বছর গবেষণা করা হয়। এতে জানা যায়, এটি কোনো নিয়ানডার্থালের দাঁত। ওই গুহায় পাওয়া কিছু ছিল মানুষেরও। আর ছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগের ভল্লুক, হায়েনা, নেকড়ে ও গুহা সিংহের হাড়গোড়।

গবেষকদের মতে, উদ্ধার করা দাঁতটি অন্তত ২৫ হাজার বছর আগের। কারণ বিশ্বজুড়ে নিয়ানডার্থালের জীবাশ্ম রেকর্ড রহস্যজনকভাবে চার হাজার বছর আগেই থেমে আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে শিশুর দাঁত সেখানে মিলেছে, সে ওই গুহায় বাস করতো না।

ইরানের জাদুঘরে প্রাচীন প্রস্তর যুগ বিভাগের প্রধান ফেরিদৌন বিগলারি বলেন, গুহাটি ছিল খুবই সরু এবং এটির সিলিং ছিল খুবই নিচে। গভীর অন্ধকারে ঢাকা ছিল এটি। কাজেই বসবাসের জন্য কখনোই এটিকে বেছে নেবে না নিয়ানডার্থালেরা।

ওয়েজমাহ গুহায় কীভাবে দাঁতটি এলো- এর জবাবে তিনি বলেন, “সম্ভবত কোনো মাংসাশী জন্তু শিশুটিকে হত্যা করেছিল। এমনটাও হতে পারে কোন প্রাণী আশপাশে কোথাও থেকে মরদেহ গুহায় নিয়ে এসেছিল।

“সত্তর ও এগারো হাজার বছর আগে এই গুহায় মাংসাশী প্রাণীর বসবাস ছিল। প্রথম দিকে শীতনিন্দ্রার জন্য ভল্লুক এই গুহাটি ব্যবহার করতো। তাদের কয়েকটি এই গুহায় মারা গেছে,” উল্লেখ করেন বিজ্ঞানী ফেরিদৌন বিগলারি।

জার্নালে উল্লেখ করা হয়, আধুনিক মানুষের ডিএনএতে নিয়ানডার্থালের অস্তিত্ব এবং জীবাশ্ম আভাস দিচ্ছে, এক সময় ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চলজুড়ে ছিল তাদের ব্যাপক উপস্থিতি। আর বিস্তৃত অঞ্চলে বেঁচে থাকা এই পূর্বসূরি প্রাণী (হোমিনিন) কীভাবে বিলুপ্ত হয়েছে- তা এখন জানার চেষ্টা করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।