পরিবেশ স্বাস্থ্যকর কিনা ইঙ্গিত করে এই পোকা!

জোনাকি পোকা। ছবি: অনিক চৌধুরী, বাংলাদেশ

আঁধারে মিটিমিটি আলো উড়িয়ে ছুটে চলা জোনাকি পোকা প্রকৃতি ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ গুরুত্ব বহন করে। প্রকৃতিকে আলোকিত করা পোকাটি Insecta শ্রেণিভূক্ত Coleoptera বর্গের Lampyridae পরিবারের সদস্য। বৈজ্ঞানিক নাম Lampyris noctiluca বাংলায় জোনাকি পোকা।

জোনাকি সাধারণত গোবরে পোকা গোত্রের এবং এক জোড়া পাখা আছে। পেটের নিচের দিকে আলো উৎপন্ন করার বিশেষ অঙ্গও রয়েছে জোনাকির। প্রজনণের জন্য পুরুষ জোনাকি বারবার আলো জ্বেলে সঙ্গীকে আকর্ষণ করে। বিপরীতে নারী জোনাকি আলো জ্বেলে প্রতিক্রিয়া এবং সম্মতিও জানায়।

জৈব প্রক্রিয়া ও শিকারের উদ্দেশ্যে শরীরে আলো উৎপাদন জোনাকির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে এই আলোতে ক্ষতিকর কোন রশ্মি ছড়ায় না। সাধারণত হলদে, লালচে, সবুজাভ বা নীলচে রঙের হয় জোনাকির আলো। এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৫১০ থেকে ৬৭০ ন্যানোমিটার হয়ে থাকে।

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে জোনাকি পোকা। বিভিন্ন প্রাণীর যেমন সাপ ও ব্যাঙের খাবার জোনাকি পোকা ও এদের লার্ভা। যা বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব রাখে। চাইনিজ একাডেমি অব সাইন্সের বন্যপ্রাণী গবেষক নাসির উদ্দিন বলেন, “জোনাকি পোকা ফুলের পরাগ এবং মধু খায়, এতে এক ফুলের পরাগ অন্য ফুলে নিয়ে পরাগায়নে সহায়তা করে জোনাকি। যা কৃষকের খাদ্য-শস্য ফলাতে সহায়তা করে।”

তিনি বলেন, “একটি এলাকায় জোনাকির উপস্থিতি ওই এলাকার পানির গুনাগুণ সম্পর্কে ধারণা দেয়। যদি পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে, তবে সেই এলাকায় জোনাকি পোকা থাকে না। ফলে এই পোকা একটি এলাকার বাস্তুতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে ভূমিকা রাখে।”

“জোনাকির শরীরে লুচিফেরিন নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা ক্যন্সার, চর্মরোগ, সিস্টিক ফ্যব্রোসিস এবং হৃদপিন্ডের নানা রোগের প্রতিষেধক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কাজেই জোনাকি সংরক্ষণ ও পোকাটি নিয়ে আরো গবেষণার দরকার,” উল্লেখ করেন নাসির উদ্দিন।

ভেজা কাঠ, ঝোপঝাড়, ডোবায় জোনাক পোকা বংশবিস্তার করে থাকে। এশিয়া, ইউরোপসহ অনেক দেশ ও অঞ্চলে দেখা যায় জোনাকি। বিশ্বে প্রায় দুই হাজার প্রজাতি জোনাকি রয়েছে। বাংলাদেশে চারটি প্রজাতি দেখা যায়। এর প্রায় সবগুলো প্রজাতিরই পাখা খাটো। তবে আশংকার কথা হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও কৃত্রিম আলোর কারণে কমে যাচ্ছে জোনাকি পোকা। বিজ্ঞানীদের মতে, যা আগামীতে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।