প্রকৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব-এই দু’টির মোহ যেন মানুষকে প্রতিনিয়ত আকৃষ্ট করে রাখে। আর এ কারণেই হয়তো ৪৩ বছর বয়সে ৪৭টি দেশ ঘুরে অদম্য এক বাঙ্গালী নারী হার মানিয়েছেন নানা প্রতিকূলতাকে। বলছি পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নেশায় প্রত্নতাত্ত্বিক হেরিটেজ ট্রাভেলার এলিজা বিনতে এলাহি’র গল্প। যিনি আজ বুধবার চট্টগ্রাম জেলায় সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ।
মূলত নিজ দেশের প্রকৃতি ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বকে তুলে ধরাই ছিল এলিজার এই ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য। সংগ্রহ করছেন প্রাকৃতিক ও প্রাচীনতম ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর তথ্য, ভিডিও এবং স্থিরচিত্র।
“ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী হলেও ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্বের প্রতি অনুরাগ ছিল ছোটবেলা থেকেই,” বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলছিলেন এলিজা বিনতে এলাহি।
তিনি জানান, এই ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রতি জেলায় পেয়েছেন বিশ্বমানের বহু স্থাপনা। এসব নিয়ে বই, স্থিরচিত্র এবং তথ্যবহুল ছবির অ্যালবামও প্রকাশ করতে চান তিনি। এবারের মতো ভ্রমণ সমাপ্ত হলেও পরবর্তীতে বিশদ গবেষণার জন্য আবারো বের হবেন বলে জানিয়েছেন এই ভ্রমণপিয়াসী।
“আমার পড়াশোনার বিষয় কখনও ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্ব ছিল না। নিজ ইচ্ছের তাগিদ বা শখের বিষয়কে আমি পড়াশোনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছি,” বলেন এলিজা বিনতে এলাহি।
২০১৬ সালে ঢাকার বলধা গার্ডেন দিয়ে এলিজার বাংলাদেশ ভ্রমণ শুরু। ব্যক্তিগত অর্থায়নে ‘কোয়েস্ট: এ হেরিটেজ জার্নি অব বাংলাদেশ’ পরিচালিত হচ্ছে এলিজার ভ্রমণ প্রকল্পটি।
তিনি বলেন, যত দেশ ঘুরেছি সব থেকে প্রাকৃতিকভাবে বেশি সমৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশ। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের ঝিরি-ঝর্ণা আমাকে বেশ আকৃষ্ট করেছে। আমি মনে করি দেশের প্রকৃতি সংরক্ষণে আমাদের নাগরিকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ আমি দেখেছি, পর্যটকরা বেশি পরিমাণে দূষণ করে থাকেন।
“যেখানে আমি পাখির শব্দ শুনবো, যেখানে আমি ঝর্ণার পানির মিষ্টি শব্দ শুনবো সেখানে পর্যটকরা গান-বাজনা, চিৎকার-চেচামেচি করেন। আমরা প্রকৃতির ছন্দগুলোকে উপভোগ করছি যেন…,” নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলেন এলিজা।
এর আগে ১৯৯৯ সাল থেকে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো ভ্রমণ শুরু করেন এলিজা বিনতে এলাহী। গেলো ২০ বছরে ভ্রমণ করেন এশিয়া ও ইউরোপের ৪৭টি দেশ। ভ্রমণে বিভিন্ন দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর খুঁটিনাটি বিষয় পরিদর্শন করেন তিনি। অচিরেই অবশিষ্ট্য দেশগুলো ভ্রমণের ইচ্ছে আছে, জানান এলিজা।
ওই দেশগুলো ভ্রমণের সময় সংগ্রহ করেন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নানা তথ্য-উপাত্ত। এশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ইতিমধ্যে তার দুটি প্রকাশনা রয়েছে। এর একটি ‘এলিজাস ট্রাভেল ডায়েরি’ আরেকটি ‘এলিজাস ট্রাভেল ডায়েরি-২’।
ইতিমধ্যে নেদারল্যন্ডস এর দি হেগ ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস-এ কম্যুনিকেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধীনে ‘বাংলাদেশে হেরিটেজ ট্যুরিজম’-এর ওপর গবেষণা সমাপ্ত করেছেন।
“গবেষণাকর্ম ও হেরিটেজ ভ্রমণে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর ঐতিহাসিক অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে শিক্ষা-গবেষণার পাশাপাশি দেশে পর্যটনশিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে,” উল্লেখ করেন এই অদম্য হেরিটেজ ট্রাভেলার।
এলিজা জানান, ৬ এপ্রিল ১৯৭৬ সালে জন্ম তার। ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জননী, স্বামী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তবে পরিবার কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং পরিবার থেকেই পাচ্ছেন সবচে বেশি অনুপ্রেরণা। তিনি জানান, এক মাস বিরতির পর আরো ৫০টি দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়বেন তিনি। এভাবে পুরো বিশ্ব দেখে এসে আরো বিস্তর গবেষণা পর তুলে ধরবেন বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত।