এভাবে মেরে ফেলতে হলো মা হাতিকে?

সাতকানিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত হাতি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার একটি গ্রামে খাবারের সন্ধানে আসা একটি বন্য মা হাতিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ৬ নভেম্বর, শনিবার ভোরে উপজেলার ১৭নং সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মইত্তাতলী বিলে বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতিটিকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মো. শফিকুল ইসলাম।

স্থানীয়রা জানান, বন্যহাতি ক্ষেতে এসে পাকা ধান খেয়ে যায়। তাই ফসল রক্ষায় ক্ষেতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ দেন কতিপয় কৃষকেরা। এতে স্পৃষ্ট হয়েই মারা যায় বন্যহাতিটি। নিহত হাতির শুড়ের নিম্নাংশে রক্তক্ষরণ হয় বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “স্থানীয়দের কাছ থেকেই বৈদ্যুতিক ফাঁদের কথা জেনেছি। সাতকানিয়া মার্দাশা রেঞ্জ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে মৃত হাতির ময়নাতদন্ত করেছেন। মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের পর অপরাধীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

”মৃত এশিয়ান হাতিটি স্ত্রী লিঙ্গের, বয়স আনুমানিক ৫০ বছর,” রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া। আলামত সংগ্রহ শেষে হাতিটিকে মাটি চাপা দেয় বনবিভাগ। পাহাড়ি বনে মৃত হাতিটির বাচ্চা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

২০১৭ সালে এ দেশের কক্সবাজার অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গাদের আগমনের পর থেকে বুনো এশিয়ান হাতিদের খাদ্য ও বিচরণক্ষেত্র হারিয়ে যেতে বসেছে। মূলত এরপর থেকেই চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ে অবস্থান নেয় বুনো হাতির দল। সেই থেকে খাবারের খোঁজে নিয়মিতই লোকালয়ে আসে হাতির দল।

বন্যপ্রাণী গবেষক ও আইইউসিএন’র হাতি বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ডা. নাসির উদ্দিন বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, ‍“চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় এলাকায় হাতির চলাচল নতুন কিছু নয়। শীত মৌসুমে খাবারের খোঁজে হাতির পাল এসব এলাকায় আসে। ঐতিহ্যগতভাবে হাতি চলাচলের পথ রয়েছে এই উপজেলাগুলোতে।”

“বন্যপ্রাণী হত্যার উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক ফাঁদ আইন বিরুদ্ধ। তবে হাতি থেকে মানুষের ক্ষয়ক্ষতিরোধে ও সুরক্ষা দিতে রেসপন্স টিম ও প্রয়োজনে ধানক্ষেত ও বাড়ি ঘরের চারপাশে ‘সোলার ফেন্সিং’ করা যেতে পারে। এতে হাতিও মারা যাবে না, আর ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে মানুষও। এছাড়া স্থানীয় গ্রামগুলোর সুরক্ষার জন্য “আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ চালু করা যেতে পারে। যাতে হাতি আসার আগেই গ্রামবাসী জানতে পারেন খবরটি,”যোগ করেন নাসির উদ্দিন।

সহযোগিতার আহ্বান...
ব্যস্ত এই পৃথিবীর প্রতিদিনকার শোরগোলে হারিয়ে যায় শত গল্প, না শোনা থেকে যায় হাজারো কথা। অগণিত বন্যপ্রজাতির ক্ষেত্রেও দৃশ্যটি ভিন্ন নয়। ছোট, বড়, বিপন্ন, বন্যজীবনের জটিলতা ও আকর্ষণীয় গল্পগুলোই আমাদের লেখকদের মূল আগ্রহ। প্রতিটি মুহুর্ত আমরা কাটাই এসবের সন্ধানে। পরিবেশ, বন্যপ্রাণী এবং বিজ্ঞান বিষয়ক সাংবাদিকতা কেবল মাত্র ভালোবাসার টানে শুরু করলেও, নিউজরুম পরিচালনায় প্রতিনিয়ত হার মেনে যায় এই আবেগও। এমন সময় প্রয়োজন হয় সহযোগিতার।

প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ছবি, ভিডিও এবং তথ্য তুলে ধরার ইচ্ছে নিয়ে পৃথিবীজুড়ে প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণকারী গবেষক, গবেষণা সংস্থা ও সংরক্ষণকর্মীদের সঙ্গে কাজ করছি আমরা। জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করি বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণ-বৈচিত্র্যের তথ্যচিত্র। ওয়েবসাইট ও ম্যাগাজিন দৃষ্টিকটু বিজ্ঞাপনে যাতে ভর্তি হয়ে না থাকে, প্রতিনিয়ত আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এতে পাঠকের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকলেও, আয়ের একটি বড় অংশ কমে যায়। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ কালীন অর্থনৈতিক সংকট। তাই আমাদের লেখকদের যথাযথ সম্মানীর পাশাপাশি বিজ্ঞাপনী আয়ের ক্ষতিপূরণের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহবান জানাই। এগিয়ে যেতে চাই একই উদ্দ্যোমে, সঙ্গে চাই আপনাদের সহযোগিতা।

যোগাযোগ: info@bengaldiscover.com