বিদ্যুৎ লাইনে শুঁড় জড়িয়ে প্রাণ গেল বন্যহাতির!

ফাইল ছবি।

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা এলাকায় পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি বন্যহাতি বৈদ্যুতিক সংযোগ লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। ১২ জুন, শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, ভোরে টোকনাফ উপজেলার হ্নীলা পশ্চিম পানখালীর খন্ডা কাটা এলাকায় বন্যহাতিটি পাহাড় থেকে বসতির দিকে যাচ্ছিল। পথেই খন্ডা কাটা গ্রামে মরিচ্যাঘোনা হতে টানা বৈদ্যুতিক লাইনের তারে জড়িয়ে যায় হাতির শুঁড়। এ সময় বৈদ্যুতিক বিকট শব্দে প্রকল্পিত হয় ওই এলাকা। এতে ঘুম ভাঙ্গে এলাকাবাসীর। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় হাতিটি।

বেঙ্গল ডিসকাভারের স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, বিশাল দেহী হাতির ‍মৃত্যুর খবরে ভোর থেকে বহু মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করেন। মারা যাওয়া হাতিটি পুরুষ লিঙ্গের। বনবিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক আহমদ জানিয়েছেন, “কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা ন্যাচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ”রোহিঙ্গাদের কারণে দশ হাজার একর বনভূমি শুধু ধ্বংস হয়নি বরং হারিয়েছি বন্যপ্রাণীদের অভয়াশ্রম। বারবার নিষেধ সত্বেও হাতি চলাচলের রাস্তায় তারা ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছে। আর হাতি ওপথে গেলে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বার বার হাতিদের হত্যার চেষ্টা করেছে। এটি তারই একটি অংশ।”

তিনি বলেন, ”গত পাঁচ মাসে বিদ্যুত স্পৃস্ট হয়ে চারটি হাতি মারা গেছে। কেউ নিজেদের দ্বায় এড়াতে হাতি বৈদ্যুতিক তারে আটকে যাবার গল্প বলতেই পারে। তবে বৈদ্যুতিক তার ওই অঞ্চলে নতুন নয় বরং যেখানে ছিল সেখানেই আছে।”

হাতি নিয়ে গবেষণা করছেন চাইনিজ একাডেমী অব সাইন্সের বন্যপ্রাণী গবেষক নাসির উদ্দিন। তিনি বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরে বেশ কয়েকটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। বার্ধক্য, রোগ ব্যাধি এবং মানবসৃষ্ট অনেক কারণে হাতির মৃত্যুর হতে পারে। যা সরেজমিনে তদন্ত ও ভেটেরিনারি ডাক্তারের মাধ্যমে ময়নাতদন্তের পর বলা যায়। টেকনাফে মারা যাওয়া হাতির ময়নাতদন্তের পাশাপাশি হাতি মৃত্যুর অন্য কোন কারণ আছে কিনা তা গবেষণা করাও জরুরি।

বাংলাদেশে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মিঠু বেঙ্গল ডিসকাভারক-কে, বনাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকা ও বন্যপ্রাণী চলাচলের পথ, বিশেষ করে যে এলাকায় হাতি চলাচল করে ওসব এলাকায় যত্রতত্র লোকালয় গড়ে উঠেছে। সেখানে নেয়া হয় বিদ্যুতের সংযোগ, সেগুলোর উচ্চতাও আবার কম থাকে। এতে প্রায়ই বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হাতি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

”বনবিভাগের উচিত দ্রুত বনাঞ্চল, পাহাড় ও সমতলের যেসব এলাকায় হাতিসহ বন্যপ্রাণী বিচরণ করে সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ লাইনের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। না হলে এ ঘটনা ভবিষতে আরো ঘটবে,” বলেন সাংবাদিক আমিনুল।