আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু-জ্বর। মানুষের পাশাপাশি ডেঙ্গু মশার কামড়ে আক্রান্ত হতে পারে পালিত প্রাণীরাও। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ’স ন্যাশানাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েসাইট (পিএমসি)-তে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তেমনই তথ্য।
এডিস স্ত্রী মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগ হয় যা খুবই প্রাচীন একটি রোগ। ৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে চীনে এটি শনাক্ত হলেও নামকরণ করা হয় ১৭৭৯ সালে। আর ১৯৫০ সালে এটি মহামারী আকারে দেখা দেয়। বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু দেখা দেয় ২০০০ সালে। তবে ২০১৯ সালে এসে তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী।
গবেষকদের মতে, ডেঙ্গু ভাইরাস প্রথম ছড়ায় বানরের মাধ্যমে। আর এই আশঙ্কা থেকে অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে ছড়ায় কিনা, তা নিয়ে গবেষণা পরিচালিত হয়। ২০১৭ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গবেষণায় দেশটির ডেঙ্গু প্রবল এলাকাগুলোকে বেছে নেয়া হয়।
গবেষণায় প্রথমত কুকুরকে বেছে নেয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। কারণ হিসেবে বলা হয়, যেহেতু মানুষ ও কুকুরের বসবাস ও ভেক্টরগুলো একই, ডেঙ্গু ছড়ানো এলাকায় কুকুরগুলো আক্রান্ত হতে পারে কিনা তা যাচাই করে দেখা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত থাইল্যান্ডের পোষা কুকুরের শুন্য দশমিক ৯৫ শতাংশে এবং উন্মুক্ত ঘুড়ে বেড়ানো শুন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ কুকুরের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। তবে ডেঙ্গতে প্রাণীদের আক্রান্ত হওয়া বিষয়টি নিয়ে ভবিষতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয় গবেষণায়।
২০১২ সালে ভারতের শীর্ষ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে ওই সময় একটি গবেষণায় পোষা এবং পালিত প্রাণী থেকেও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে বলে উল্রেখ করা হয়েছিল।
তবে কুকুর, বিড়াল, শূকরসহ গৃহপালিত অন্যান্য প্রাণী মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে জানান চিকিৎসক ও গবেষকরা। যদিও এক্ষেত্রে আক্রান্তের হার খুবই কম।
মশা নিয়ে গবেষণা করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল ইসলাম বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, বেশিরভাগ রোগই বিভিন্ন প্রাণীর মাধ্যমেই মাধ্যমে মানুষের দেহে এসেছে। যেমন- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এসেছে বানর থেকে, আরো ভাইরাস যেমন- ম্যালেরিয়া, জিকাও এসেছে বানর থেকে। তাই মশার কামড়ে আরো প্রাণি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অন্য আরো পালিত প্রাণী যেমন-গরু, ছাগল আক্রান্ত হয় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটি এখনো নির্ণয় করা হয়নি। তবে দু’একটি প্রাণী যে আক্রান্ত হয় বা হবে না তাও শতভাগ বলা কঠিন।”
ডেঙ্গুতে প্রাণীদের আক্রান্তের বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন এই গবেষক।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. আজমত আলী বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, “বাংলাদেশে এ ধরনের কোন হিস্ট্রি বা তথ্য এখনো বাংলাদেশে পাওয়া যায়নি। তবে মশা কামড় দিলে কুকুর-বিড়ালের মতো এমন প্রাণী আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
তবে এক্ষেত্রে পোষা প্রাণীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার করা বিষয়ে জোর দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও মতে, বিশ্বের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি, অর্থ্যাৎ ২৫০ কোটি মানুষ এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে।