
বাংলাদেশে পাখি হত্যায় ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও আধুনিক ডিভাইস। জনমানবহীন দুর্গম বিলাঞ্চল, আইন প্রয়োগকারীদের সচরাচর যাতায়াত ও নজরদারিবিহীন দুর্গম স্থানে প্রকৃতি ও পরিবেশের কতিপয় দুষ্কৃতকারীরা ব্যবহার করছে আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবিত বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস বা পাখির মারণ ফাঁদ।
ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ভিন্ন ভিন্ন কন্ঠস্বর ও ডাক রেকর্ড করে তা রাতের আঁধারে মাইক বা সাউণ্ড সিষ্টেমের সাহায্যে বাজানো হয় পাখিদের রাত্রিকালীন বিচরণ, প্রজনন ক্ষেত্রে ও আবাসস্থলে। সাউন্ড সিস্টেমের চারপাশে পাতা থাকে পাখি শিকারের জন্য জাল বা ফাঁদ। স্বজাতির কণ্ঠস্বর, ডাক ও রেকর্ড করা সাউণ্ড শুনে বিভ্রান্ত পাখিরা এগিয়ে আসে সাউণ্ড সিষ্টেমের নিকটে।
আগমণ পথে আটকে যায় পেতে রাখা মারণ ফাঁদে। আর এভাবেই ডিজিটাল টেকনোলজির অপপ্রয়োগ করে পাখি শিকার ও প্রকৃতি হত্যার আত্মঘাতী নেশায় মেতে উঠেছে কিছু বিবেকহীন দুষ্কৃতিকারী চক্র। যারা পরিবেশ, প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী, ইকোসিস্টেম ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বিনষ্টের মারণ খেলায় মেতে উঠেছে।
সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার প্রকৃতি সংরক্ষণের দীক্ষায় নিবেদিত প্রাণ স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠন ’সেইভ ওয়াইল্ডলাইফ তালা’র সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে নিজ জেলার সীমানা পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বিল থেকে গভীর রাতে উদ্ধার করে ডিজিটাল সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত পাখি হত্যার ডিভাইস ও জাল।
ওই সময় প্রায় দুই হাজার ফুট দীর্ঘ জাল, আটটি অত্যাধুনিক মাইক ও সাউণ্ড সিস্টেম, দুটি ব্যাটারি, ডিজিটাল ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে খুলনা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করে সংগঠনটির সদস্যরা। দেশের অন্য কোথাও এই ডিভাইস ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা কঠোর নজরদারি দরকার। প্রতিহত করা দরকার এই পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের শত্রুদের।
পাখি ও বন্যপ্রাণী হত্যায় জড়িত দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে তাদের মুখোশ উন্মোচিত করার এখনই সময়, এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি সমাজের সকল প্রকৃতি যোদ্ধাদের।