করোনা মহামারিতে যখন থমকে গেছে বিশ্ব, তখন বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে পঙ্গপালের হামলা। যদিও পতঙ্গটির আক্রমণ নতুন না হলেও এবারের ব্যাপ্তি ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্বকে। তাই নয়া এই সংকট মোকাবেলায় উপায় খুঁজছে বিভিন্ন দেশ।
সম্প্রতি আফ্রিকার দেশগুলোর পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান ও ভারতে পতঙ্গটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও মোকাবেলা করছে এই সংকট। ভারতের পর বাংলাদেশেও পঙ্গপালের হামলার জল্পনা কল্পনার মধ্যেই এদেশের টেকনাফে পতঙ্গটির আক্রমণের খবর সরব হয়। তবে পরবর্তীতে বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ জানায়, এটি পঙ্গপালের মতো হলেও আসল পঙ্গপাল নয়। এদেশে পতঙ্গটির প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা নেই।
সম্প্রতি ভারত মহাসাগরের ওপর থাকা পঙ্গপালের একটি দল ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলেও ধারণা করা হয়। পতঙ্গগুলি গাছপালাসহ আবাদি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষম। পতঙ্গটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে বিশ্বের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা-ফাও এক সতর্ক বার্তায় জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান পঙ্গপাল হর্ণ অফ আফ্রিকা খ্যাত ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়াসহ পূর্ব আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে ফেলে মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, পঙ্গপালের উপর্যুপরি প্রজনন ও সংখ্যা বাড়ার কারণে আগামীতে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে পঙ্গপালের সংখ্যা বৃদ্ধির সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে বলে একাধিক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির জলবায়ু ও আফ্রিকা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড মুনাং এক সাক্ষাতকারে এ দাবি করেন।
তিনি বলেন, শিল্প বিপ্লব এবং ২০০৯ সালের পর গত পাঁচ বছর পৃথিবী যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি উষ্ণ ছিল। এতে দ্রুততম সময়ে উষ্ণ হওয়া ২০টি দেশের আফ্রিকা মহাদেশ সংলগ্ন ভারত মহাসাগরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা। ফলে আফ্রিকার দেশগুলোতে স্বাভাবিকের চাইতে ৪০০ শতাংশের বেশী বৃষ্টিপাত হয়। যা পঙ্গপালের ব্যাপক বংশবৃদ্ধি ও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে পঙ্গপাল থেকে রক্ষা পেতে সৌর শোষকের মতো উপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগাম ফসল তুলে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন রিচার্ড মুনাং।
পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে অরগানোফসফেট জাতীয় কীটনাশক আপাতত ব্যবহার করা হলেও পরিবেশ, মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি বিবেচনায় পদ্ধতিটি সর্বসম্মত নয়। এজন্য বিজ্ঞানীরা পরিবেশ এবং প্রাণীবান্ধব পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। অনেক দেশেই পঙ্গপাল মানুষ ও প্রাণীর উপাদেয় খাদ্য হলেও তা পঙ্গপালের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নয়।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আগামীতে পঙ্গপালের আক্রমণ আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এতে খাদ্য নিরাপত্তা সংকটে পড়ার পাশাপাশি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়েরও আভাস দিয়ে আন্তার্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থাগুলো।