
ঘনবসতি ও জলাভূমির মহানগর জার্কাতা থেকে রাজধানী সরিয়ে নিতে চাইছে ইন্দোনেশিয়ার সরকার। গেলো সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো এ তথ্য জানিয়েছেন। এজন্য বেছে নেয়া হয়েছে জঙ্গল ঘেরা বোর্নিও দ্বীপকে।
যেখানে রয়েছে চিরহরিৎ বন কালিমানতান। তবে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে বিরূপ মন্তব্য করেছেন দেশটির পরিবেশবিদরা।
যদিও প্রস্তাবিত রাজধানীটি আঞ্চলিক শহর বালিকপাপান ও সামারিন্দার কাছাকাছি এলাকা দাবি করছে দেশটির সরকার। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ন্যূনতম ঝুঁকি নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
টেলিভিশন ভাষণে উইদোদো বলেন, সরকার ইতিমধ্যে এক লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করেছে। কৌশলগতভাবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কারণ এটি ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রবিন্দু এবং শহরাঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত।
“সরকার পরিচালনা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবাকেন্দ্র হিসেবে জাকার্তার কাঁধের বোঝা অনেক ভারি হয়েছে। প্রস্তাবিত এই উদ্যোগ নিয়ে পার্লামেন্টে একটি বিল উপস্থাপন করা হবে,” যোগ করেন উইদোদো।

পরিবেশবিদরা অবশ্য তীব্র সমালোচনা করছেন ইন্দোনেশিয়ান সরকারের নয়া এই উদ্যোগকে। কারণ এতে রয়েছে চিরহরিৎ বন কালিমানতান। যেখানে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী এবং ওরাং ওটাং (লেজবিহীন বানর গোত্রের বনমানব)। আর বিশ্বের যে কয়টি এখনো প্রকৃতিক পরিবেশে ওরাংওটাং বাস করে, এর একটি কালিমানতানে।
গ্রিনপিসের ইন্দোনেশিয়ার ক্যাম্পেইনার জ্যাসমিন পুত্রি বলেন, অভয়ারণ্য কিংবা সংরক্ষিত স্থানে যাতে নতুন রাজধানী নির্মাণ করা না হয়, সরকারকে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
অনেকদিনের এই পরিকল্পনা দ্রুত দেশটির সরকার অনুসরণ করবে বলে গুঞ্জন চলছিল। অবশ্য অর্ধশতকেরও বেশি বছর আগে একই পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন দেশটির স্বাধীনতার স্থপতি সুকার্নোও।
বিবিসি জানায়, রাজধানী পরিবর্তনে ইন্দোনেশিয়া সরকারকে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। যদিও বর্তমানে জাকার্তা শহরের শুধু ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণেই বছরে খরচ হয় একশ ট্রিলিয়ন রুপিয়াহ। নয়া রাজধানীতে নাগরিকদের উন্নত সুবিধা বাড়াতে দিতে ব্যাপক এবং বিস্তারিত আকারে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাকার্তা থেকে রাজধানী সরিয়ে নেয়ার সঙ্গে জাভাদ্বীপ থেকে স্থানান্তরিত হবে ক্ষমতার পাদপীঠও। বিস্তৃত দ্বীপপুঞ্জটিতে ২৬ কোটি মানুষ বসবাস করেন।
দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক কেভিন ও’রউরকি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামীতে শহরটি মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। তবে রাজধানী সরিয়ে নেয়া হলেও অর্থ-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আরো কয়েক দশক জাকার্তা মহানগরী হিসেবেই থাকবে।