
পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই বাংলাদেশের চট্টগ্রামে পরিচালিত হচ্ছে সাড়ে চার শতাধিকের বেশি ইটভাটা। শীত মৌসুমে ভাটাগুলোতে ইটের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে বেড়ে যায় পরিবেশ দূষণের মাত্রাও। ইটভাটার দূষণে চট্টগ্রামের বায়ুর মান এখন মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও চলছে অভিযান। কিন্তু এরপরও থেমে নেই অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) লোহাগাড়া উপজেলায় ছয় ইটভাটাকে ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন এ আদেশ দেন।
ইটভাটাগুলো হলো- লোহাগাড়া উপজেলার মেসার্স খাজা ব্রিকস, মেসার্স বার আউলিয়া ব্রিকস, মেসার্স আকতারিয়া ব্রিকস, মেসার্স এ এইচ ব্রিকস, মেসার্স মজিদিয়া ব্রিকস এবং মেসার্স আরব ব্রিকস। প্রত্যেক ইটভাটাকে ৩ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মুক্তাদির হাসান জানান, পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে ইটভাটাগুলো পরিচালনা হয়ে আসছিল। এজন্য ছয় ইটভাটাকে মোট ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অবৈধ ইটভাটার চিত্র
চট্টগ্রামে ৪০৮টি ইটভাটার ৩১২টিই অবৈধ। বাকি ৯৬টি জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হলেও সেগুলো রাজস্ব ফাঁকির দিয়ে চলছে। তবে পরিবেশ অধিদফতরের হিসেবে চট্টগ্রামে ইটভাটার সংখ্যা ৪০৫টি। প্রশাসনের নজরদারি অভাবে প্রতি বছরই বাড়ছে ইটভাটা। পাহাড় কেটেও তৈরি হচ্ছে ইটভাটা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সবচে বেশি ইটভাটা আছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। জেলা প্রশাসনের হিসাবে উপজেলাটিতে ইটভাটা ১০৯টি এবং পরিবেশ অধিদফতরের হিসাবে ৯৬টি। তবে রাঙ্গুনিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে ইটভাটা আছে ১৫০টি।
শুধু রাজানগর, দক্ষিণ রাজানগর এবং ইসলামপুর ইউনিয়নে ইটভাটা আছে ১১৩টি। বাকি ইটভাটাগুলো উপজেলার কোদালা, সরফভাটা, হোসনাবাদসহ কয়েকটি ইউনিয়নে। রাজানগর, দক্ষিণ রাজানগর এবং ইসলামপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ। শত শত একর ফসলি জমি ও পাহাড় কেটে এসব ইটভাটা গড়ে উঠলেও তা বন্ধে কার্যকর পদেক্ষপ নেই প্রশাসনের।
অপরদিকে রাঙ্গুনিয়ার পার্শ্ববর্তী রাউজানে জেলা প্রশাসনের তালিকায় ইটভাটার সংখ্যা ৩৬টি। শুধু এ উপজেলার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড ও হলদিয়া ইউনিয়ন এলাকায় ইটভাটা আছে ৬০টির বেশি। তবে পুরো উপজেলায় ইটভাটা আছে ৮০টির বেশি। যার অধিকাংশইফসলি জমি, পাহাড়ের পাদদেশ এবং লোকালয়ে গড়ে উঠেছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে ফটিকছড়িতে ৪৪টি, সাতকানিয়ায় ৩৮টি, হাটহাজারীতে ৩৯টি, চন্দনাইশে ৩১টি, লোহাগাড়ায় ১৫টি, আনোয়ারায় দুটি, বাঁশখালীতে ২টি, সন্দ্বীপে ৪টি, মিরসরাইয়ে ৮টি, সীতাকুণ্ডে ২টি, বোয়ালখালীতে ৭টি ও পটিয়ায় ৩টি ইটভাটা ছাড়পত্র ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদফতর থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে ৪০৫টি ইটভাটার মধ্যে ছাড়পত্র আছে ২৬২টিতে। ৩৫৫টি ইটভাটার পরিবেশসংক্রান্ত লাইসেন্স হালনাগাদ করেনি। ১৪৩টি ইটভাটার লাইসেন্সই নেই। পরিবেশ আইন অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তি জিগজ্যাগ চিমনি রয়েছে ১১৯টি ইটভাটার। উন্নতমানের অত্যাধুনিক হাইব্রিড হফম্যান কিলনধারী ভাটা রয়েছে মাত্র একটি ও অটো টানেল কিলন ভাটা রয়েছে দুটি।