শরীর ক্লান্ত, মন ফ্রেশ

বরিশালের ভীমরুলির খালে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নৌভ্রমণে লেখক।

গত দশ বছরে অন্তত ২০ বার বরিশাল যাওয়ার প্ল্যান হয়েছে। কিন্তু যাওয়া হয়নি। একবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাছাকাছি গিয়েছিল, কেবিন বুক করা হয়েছিল, একজন টাকা নিয়ে সদরঘাট গিয়েও ছিল। কিন্তু তখনই জানা গেল সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মারা গেছেন। তাই সব পরিকল্পনা লন্ডভন্ড।

এবার মাত্র দুদিনের পরিকল্পনায় আমরা পারাবত-১২তে হাজির। টিম বড় হতে হতে ১৭ জনের বহর। তৌহিদ সৌরভ সব গুছিয়ে দিলেন। শেষ মুহুর্তে উৎপল শুভ্রের অন্তর্ভূক্তি আনন্দ ডাবল করে দিল।

বরিশাল ঘাট থেকে সোজা ভীমরুলি, পেয়ারার ভাসমান হাটে। সেখানে দুই ঘণ্টার জন্য ট্রলার নিয়ে ভীমরুলির খালে খালে ভেসে বেড়ানো। দুই পাশে সবুজ আর সবুজ, পেয়ারা আর আমড়ার বাগান। বাগানের মাঝে মাঝে সরু নালা।

আহা কি যে মন ভালো করা অনুভূতি, লিখে সেটা আপনাদের বোঝাই, তেমন সাধ্য আমার নেই। এ শুধু ফিল করা যায়, বলা যায় না। মৌসুম শেষ প্রায়, তাই ভাসমান বাজারে দোকান কম; তবু কী নেই তাতে- পেয়ারা, আমড়া, লেবু, কচু, কাচকলা, কাকরোল- হরেক ফল, হরেক সবজি।

ভীমরুলি থেকে গুঠিয়া মসজিদ, তারপর দুর্গাসাগর। আহা দুর্গাসাগরে সবাই নেমে পড়লো মন ভেজাতে। সেখান থেকে শহরে চারণ কবি মুকুন্দ দাসের ভিটা। তারপর লাঞ্চ।

সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণের বিশ্রাম, তারপর অক্সফোর্ড মিশন আর সবশেষে জীবনানন্দের ভিটা। সেখানে গিয়ে মন খারাপ হয়ে গেল। বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবির ভিটার কোনো চিহ্নই নেই। আমরা কত যে দুর্ভাগা। সন্ধ্যায় মাছের বাজারে, কেনা হলো টাটকা ইলিশ। শুধু কেনা নয়, সেখানেই কাটাকুটি, মশলা মাখানো।

লঞ্চে উঠে মুন্নী নিজেই সেগুলো ভাজলো, রাধলো। তারপর ইলিশ সহযোগে আমার জন্মদিনের বিলম্বিত উদযাপন। ৩৩ ঘণ্টায় যতটা সম্ভব বরিশাল দেখা। প্রথম দর্শনেই গভীর প্রেম।

রাতে সবার কাছে ভোট চাইলাম, ট্যুর কেমন হলো? সবাই ১০/১০। ফরাসী কন্যা ডেবোরা চার শব্দে বলে দিলেন পুরোটাই- শরীর ক্লান্ত, মন ফ্রেশ। আই লাভ ইউ বরিশাল, আবার দেখা হবে।

লেখক: সাংবাদিক, বাংলাদেশ