গেলো সপ্তাহ থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঢলে বাংলাদেশের ২১ জেলার ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। সেই প্রভাব পড়েছে ওই অঞ্চলের গবাদি পশুর ওপরও। খাবার দিতে না পারায় পালিত পশুর জন্য কাঁদছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। এমনই চিত্র সিলেটের সুনামগঞ্জে।
জানা গেছে, পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জে আনুমানিক দেড় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। যাদের প্রত্যেকটি পরিবারেই রয়েছে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি। পানিবন্দি মানুষেরা অনাহারে-অর্ধাহারে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করলেও একমাত্র সম্ভল গৃহপালিত এসব পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরপাড়ের বন্যাক্রান্ত মদনাকান্দি গ্রামের প্রীতি রাণী তালুকদার বলেন, আমার তিনটি গরুর সারা বছরের খাবার বাড়ির সামনে রেখেছিলাম বন্যায় ভাসাইয়া নিছে। নিজে খাই নাই, তা নিয়া কষ্ট নাই। কিন্তু গরুর খাওন নিয়া কষ্টে আছি।
ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের হরিপুর নতুন হাটির মন্তুষ সরকার বলেন, বসত ঘরে পানি উঠায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশির বাড়িতে। কিন্তু নিজের ঠাঁই হলেও গরু নিয়ে বিপাকে আছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠঘাট ও উঁচু স্থানগুলো বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়াতে পালিত পশু ও হাঁস-মুরগি অনত্র নিয়ে যাচ্ছেন বানবাসী মানুষ। কৃষকরা জানায়, আপাতত গবাদি পশু নিয়ে বিভিন্ন বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উঁচু রাস্তায় আশ্রয়ে রেখেছেন। নিজেরা পানিবন্দি থাকলেও গবাদি পশুর জন্য পলিথিন কিংবা কাপড়ের তৈরি ছাউনি করেছেন।
অনেকের সেই সুযোগ না থাকায় গবাদি পশুদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই রাত্রিযাপন করছেন। আবার অনেকে গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে সরাতে পারলেও খাদ্য সরিয়ে আনতে পারেননি। এতে পানিতে গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য খড়ে পচন ধরেছে, আবার কোথাও ভেসে গেছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের ডুংরিয়া গ্রামের বড় গৃহস্থ মতিন মিয়ার ৪০টির বেশি গরু রয়েছে। বন্যার পানিতে গ্রামের কীত্তা ও উঁচু স্থান এবং বাড়ীর আশপাশ ডুবে যাওয়ায় গুরু নিয়ে মহাবিপদে আছেন তিনি। বন্যায় বাড়িতে পানি উঠলে নিজেদের জায়গা অন্যত্র হলেও এতোগুলে গরুর কি হবে এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তাঁর।
কৃষকদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র, খাবারসহ যাবতীয় উদ্যোগ নেয়া হলেও বন্যার্ত মানুষের জীবিকার সম্বল পালিত পশুগুলোর জন্য নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। ফলে এলাকাগুলোতে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট তীব্র হচ্ছে দিনদিন।
তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরপাড়ের ভবানীপুর গ্রামের কৃষক তাপস তালুকদার বলেন, গবাদিপশু আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যর মতো গুরুত্বপূর্ণ ও আদরের। কিন্তু বন্যা আসলে মানুষের খাবার নিয়ে প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও গবাদিপশুর খাবার নিয়ে কোন ধরনের তৎপরতা দেখা যায় না।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার সরকার বলেন, বন্যায় গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে সরকারি বরাদ্দ নেই, তবে শিগগিরই তা আসবে। পানিবন্দি প্রতিটি পশুর জন্য দিনে এক কেজি দানাদার খাদ্য ও তিন কেজি খড়ের প্রয়োজন।
কিন্তু উপজেলার পানিবন্দি প্রায় ২০ হাজার গবাদি পশুর খাবারের সংকট রয়েছে। এসব পশুর স্বাস্থ্যহানিও দেখা দিবে। চারদিক পানিতে নিমজ্জিত থাকায় প্রাকৃতিক কোন খাবারও জোগাড় করাও সম্ভব হচ্ছে না।
“বন্যায় জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় গো খাদ্যে সংকটের বিষয়ে উর্ধবতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। শিগগিরই গবাদিপশুর খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে,” জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান।