ফের হালদা নদী দূষণ: মাছ মরার আশঙ্কা!

হালদা নদী দূষণ ও মাছ মারা যাওয়া যাওয়ার চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

আবারো বাংলাদেশের চট্টগ্রামে মাছের প্রাকৃতিক প্রজননকেন্দ্র হালদা নদী ও সংলগ্ন খাল দূষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নদীতে মাছ মারা যাবার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আগে থেকে জমানো বর্জ্য খালে ছেড়ে দেয় এশিয়ান পেপার মিলসহ কয়েকটি কারখানা। এতে শুরুতে কালচে ও পরে লাল হয়ে উঠে খালের পানি। এতে প্রায়ই মাছ মরে ভেসে উঠে।

আবারো দূষিত পানি নি:সরণের খবর পেয়ে গতকাল শনিবার রাতে  সরেজমিনে পরিদর্শন করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন। এ সময় তিনি হাতেনাতেই প্রমাণ পান দূষণের।

তিনি জানান, “গত রাতে খালের পানিতে এশিয়ান পেপার মিলের দূষিত পানি ছাড়ার বিষয়টি নিজেই দেখে এসেছি। এই ঈদ মৌসুমে ব্যস্ততার সুযোগে এমন অপকর্ম করেছে কারখানাটি।” সংগৃহীত নমুনা পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠানো হবে উল্লেখ করেন মো. রুহুল আমিন।

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, এশিয়ান পেপার মিল সংলগ্ন বাইপাস লাইন ধরে বর্জ্য মরাছড়া খাল ধরে একুতি খালে মিশছে। হালদার সঙ্গে সংযুক্ত কাটাখালি, খন্দকিয়া, বাথুয়া, শাহ মাদারি ও কৃষ্ণখালী খাল ধরে বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি যাচ্ছে নদীতে। একইসঙ্গে মদিনা ট্যানারি, রওশন ট্যানারি ও রিফ লেদার নামের অপর তিনটি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যও কৃষ্ণখালি ও খন্দকিয়া খাল হয়ে মদুনাঘাট হয়ে মিশছে হালদায়।

হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমম্বয়ক ও মাছ গবেষক মঞ্জুরুল কিবরিয়া দূষণের শিকার এলাকাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

তিনি বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন,  “পেপার মিলের বর্জ্যের কারণে খালের পানিতে কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই। এ কারণে প্রচুর মাছ মারা যায়। গত রাতে ছেড়ে দেয়া দূষিত পানি খাল থেকে নদীতে গেলে আরো মাছ মারা যেতে পারে, শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, “শাখা খালগুলোতে পানিতে ঘূর্ণিভূত অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কমে যায়, যা দশমিক পাঁচ মিলিগ্রামের মতো। এতে পানিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার কোন সুযোগ নেই।”

তিনি জানান, পেপার মিলটির বর্জ্যের কারণে গত ২০১৮ সালের জুনে ভয়াবহ দূষণের শিকার হয়েছিল হালদা নদী। যা গবেষণায়ও উঠে এসেছিল। ওই সময় ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে ইটিপি নির্মাণের নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু জরিমানা দেয়া তো দূরের কথা, ইটিপিও নির্মাণ করেনি কারখানাটি।

স্থানীয় বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম বলেন, “৪০ বছর ধরে দেখে আসছি এই খাল। এই রাক্ষুসী মিলের ময়লা জমে খাল আর খালের চেহারায় নেই। আমাদেরই নি:শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়, এতো গন্ধ। আর বহু মাছ মরে ভেসে উঠে।”

নন্দীর হাট এলাকার জাকের এন্ড সন্সের স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, “পাঁচ বছর ধরে এ অবস্থা দেখে আসছি। এরা যথেষ্ট প্রভাবশালী, আমরা অসহায় তাদের কাছে। কিছু করেন, এই মিলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই আমরা।”

এর আগে গেলো জুলাইয়ে তরল বর্জ্য সরাসরি হালদা নদীতে নি:সরণের অভিযোগে হাটহাজারী ১০০ পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।