ফের বন্যহাতির রহস্যজনক মৃত্যু!

মারা যাওয়া বন্যহাতিটি। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে আবারো একটি বন্যপ্রাণী হাতির মৃত্যু হয়েছে। গেল ২২ নভেম্বর, রোববার দিবাগত রাতে জেলার লোহাগড়া উপজেলার বড়হাতিয়ায় বন্যহাতিটির মরদেহ পাওয়া যায়। পরে ২৩ নভেম্বর সকালে স্থানীয়রা বিষয়টি বনবিভাগকে জানায়।

এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার কুমিরাঘোনার চাকফিরানী দক্ষিণের ঘোনা বোইন্না বিল নামক স্থানে ধান ক্ষেতের পাশে হাতির মরদেহ পড়ে ছিল। তাদের ধারণা, রোববার দিবাগত রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিটির মৃত্যু হতে পারে। এর আগে ২০১৯ সালে চাকফিরানির আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি বন্যহাতি মারা গিয়েছিল।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকের হোসেন বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, বন্যহাতির মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন এক বন কর্মকর্তা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে।

চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ অফিসার মো. মনজুরুল আলম জানান, বন্যহাতির মারা যাওয়ার খবর পেয়ে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটি মারা যাওয়ার খোঁজখবর নিয়েছে। ময়না তদন্তের পর কীভাবে মারা গেছে তা জানা যাবে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, গেল এক বছরে বন্যহাতি মারা গেছে ১৮টি। এর মধ্যে কক্সবাজার অঞ্চলে অন্তত ১৩টি বন্যহাতিকে বর্বরভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া বান্দরবানের লামা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামেও কয়েকটি হাতি মারা গেছে।

প্রকৃতি ও প্রাণী সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা- আইইউসিএনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এখন ২০০টি হাতি রয়েছে। অথচ ২০০৪ সালে সংস্থাটির জরিপে হাতির সংখ্যা ছিল ২৭৯ থেকে ৩২৭টি। এরমধ্যে ১৯৬ থেকে ২২৭টি হাতি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বাস করে। বাকিগুলো বিচরণ করে ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারজুড়ে।

চায়নিজ একাডেমী অব সাইন্সের বন্যপ্রাণী গবেষক নাসির উদ্দিনের মতে, ”গত এক বছরে বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রায় ১৮টি হাতি মারা যায়। ময়না তদন্ত এবং অন্যান্য অনুসন্ধানের পর মৃত হাতির অনেকগুলোই স্বাভাবিক মৃত্যু বলে বন বিভাগ থেকে বলা হয়েছে। তবে এরমধ্যে গুলি করে, বিষ প্রয়োগ এবং বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হাতি হত্যার অভিযোগও পাওয়া গেছে।”

”এভাবে বাংলাদেশে হাতি মারা যেতে থাকলে শিগগিরই এ দেশ থেকে হাতি হারিয়ে যাবে। তাই হাতি সংরক্ষণকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হাতি সংরক্ষণের উদ্যোগগুলো কার্যকারিতা নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা পূর্বক প্রয়োজনে সংরক্ষণ কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে, তাহলেই ভবিষ্যতে হাতি সংরক্ষণ সম্ভব হবে,” যোগ করেন হাতি গবেষক নাসির উদ্দিন।