‘পঙ্গপাল’ ভারত ও বাংলাদেশের জন্য দু:সংবাদ!

পঙ্গপাল। ছবি: সংগৃহীত

করোনা ভাইরাসের চলমান সংকটে বিপর্যস্ত বিশ্বের অর্থনীতির চাকা, দেখা দিচ্ছে খাদ্য সংকটও। এ পরিস্থিতিতে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের পর উপমহাদেশের দেশগুলোতে পঙ্গপালের হামলার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এতে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে  কঠিন চ্যালেঞ্জ মুখে পড়তে হতে পারে ভারত ও বাংলাদেশকেও।

ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম দ্যা হিন্দু জানায়, ইতিমধ্যেই পঙ্গপালের একটি দল ভারত মহাসাগর অতিক্রম করছে। দেশটিতে হামলার পর বাংলাদেশে যেতে পারে পঙ্গপালের ঝাঁকটি। পঙ্গপালের আরেকটি দল ইয়েমেন, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান হয়ে ভারত অতিক্রম করবে।

পঙ্গপালের একটি ঝাঁকে কয়েক কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে। দিনে একটি ঝাঁক ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে। যা ব্যপ্তি হতে পারে কয়েক’শ কিলোমিটার। ৩৫ হাজার মানুষের একদিনের খাবার খেয়ে ফেলতে সক্ষম এক ঝাঁক পঙ্গপাল।

পঙ্গপালের আক্রমণ ভারত ও বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা সংকটে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন দু’দেশের কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ভারতের সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, কয়েকটি রাজ্য পঙ্গপালে আক্রান্ত হয়েছে। যা প্রতিবেশি বাংলাদেশের জন্য একটি খারাপ সংকেত। অপরদিকে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় টেকনাফ উপজেলায় অজ্ঞাত এক পোকা হামলা করেছে বলে জানায় দেশটির কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। এতে পঙ্গপাল নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বাংলাদেশও।

টেকনাফ উপজেলায় অজ্ঞাত পোকাটি পরিত্যাক্ত একটি খামারের গাছের সব পাতা খেয়ে ফেলে। কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপপরিচালক মো. আবুল কাশেম জানান, এমন পোকা আগে কখনো দেখেননি তারা।

“পোকাগুলোর সঙ্গে ঘাসফড়িংয়ের কিছুটা মিল আছে, তবে আকারে কিছুটা ছোট। পোকাগুলোর ছবি ঢাকায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিজ্ঞান বিভাগে পাঠানো হয়েছে,” যোগ করেন আবুল কাশেম।

তিনি বলেন, “ওই পোকাগুলো একটি পরিত্যাক্ত বাড়ির মধ্যে আটকে ছিল। সেগুলোকে কীটনাশক দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পোকাগুলোর কোনো পাখা ছিলো না, আর তাদের শরীর নরম ছিলো। কীটনাশক দেয়ার সময় শব্দ করে ফেটে যাচ্ছিলো পোকাগুলো। খুবই ভয়ানক পোকা ছিল, গাছের একটিও পাতা বাকি রাখেনি। কোথা থেকে এসেছে তা এখনো অজানা।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিজ্ঞান বিভাগের পাঠানো পোকাগুলোর ছবি ও ভিডিও খতিয়ে দেখছেন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন। তিনি জানান, পোকাগুলো দেখতে প্রাথমিক স্তরে থাকা পঙ্গপালের মতো। পাখা গজানোর পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিক স্তর পার হলে তা পুরোপুরি গজিয়ে যেতে পারে। এগুলো আসলে কী তা স্বচক্ষে না দেখে বলা অসম্ভব।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালক ড. মো. আবদুল মুয়িদ জানান, “টেকনাফের ওই পতঙ্গগুলো ঘাসফড়িংয়ের একটি ধরন, কিন্তু পঙ্গপাল না। এটি কী ধরনের পোকা তা জানতে বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (ইরি) পতঙ্গবিজ্ঞান বিভাগকে অবগত করা হবে।

“পঙ্গপাল খুবই ধ্বংসাত্মক। তারা চলার পথের সব শস্য খেয়ে ফেলে। দ্য হিন্দুর প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আরো তথ্য সংগ্রহ করা হবে,” যোগ করেন আবদুল মুয়িদ। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ ড. মো. রুহুল আমিন জানান, “পঙ্গপাল যদি ভারতে পৌঁছায়, এটি নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।”

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২১ এপ্রিল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভয়াবহ মাত্রার পঙ্গপাল আফ্রিকার দেশগুলোতে ফসল ধ্বংস করছে। এরইমধ্যে পতঙ্গগুলো ইয়েমেন, সৌদি আরব, ইরাক, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) আরব উপত্যকার বেশ কয়েকটি দেশে বংশবিস্তার করছে। যা আফ্রো-এশীয় দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলতে পারে।