কেন হত্যা করা হলো মেছোবাঘের শাবকটি?

উদ্ধারকৃত মৃত মেছোবাঘের শাবক। ছবি: সংগৃহীত

একটি বিলুপ্তপ্রায় মেছোবাঘের শাবককে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। গেলো রোববার বিকেলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীর ফতেপুর ইউনিয়নের আলাওয়াল দিঘী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, মৃত অবস্থায় উদ্ধারকৃত তিনফুট দৈর্ঘ্যের শাবকটির পায়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন। হাটহাজারী পৌরসভার ১১ মাইল এলাকার মো. সাজ্জাদ নামে এক যুবককে মেছোবাঘটির মরদেহ খালে ফেলে দিতে দেখা যায়।

২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন) বাংলাদেশে মেছোবাঘকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে। বাংলাদেশের ১৯৭৪ [৩] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, এক সময় লোকালয়ে অহরহ ছিল এদের বিচরণ। এদের সংখ্যা এখন কমেছে। তবে বন-জঙ্গল কমতে থাকায় খাবারের খোঁজে মাঝে মাঝে লোকালয়ে আসলে এদের দেখা যায়।

“হত্যার শিকার মেছোবাঘটি হয়তো খাবারের খোঁজে লোকালয়ে এসেছিল। কারণ প্রাকৃতিক জলাভূমি ও ঝোপঝাড় বিলীন হওয়াতে এই প্রাণীগুলোর খাবার সংকট বেড়েছে,” উল্লেখ করেন গবেষক মঞ্জুরুল কিবরিয়া।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এই প্রাণীগুলো সংরক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এই প্রাণীবিদ।

গবেষকরা জানান, ইংরেজিতে ফিশিং ক্যাট বলা হয়। তবে বৈজ্ঞানিক নাম নাম ‘Prionailurus viverrinus’। নামের সঙ্গে বাঘ থাকায় ভয়ঙ্কর প্রাণী ভেবে এদের হত্যা করে থাকে মানুষ। তবে নিরীহ এই বন্যপ্রাণী মানুষের ক্ষতি করে না। আর মেছোবাঘ ডাকা হলেও মাছ এদের প্রধান খাবার নয়।

কথিত আছে, এরা রাতে জলে লেজ ফেলে শব্দ করে এবং জলে প্রস্রাব করে। শব্দে ও প্রস্রাবের গন্ধে নাকি বড় মাছেরা খাবার ভেবে ছুটে আসে। তখন এরা মাছ ধরে ফেলে। মূলত ইঁদুর, নির্বিষ সাপ, বুনো খরগোশ, পাখি, কাঁকড়া, কচ্ছপ, শিয়াল, কুকুর, বাছুর, ছাগল, হাঁস-মুরগি শিকার করে প্রাণীটি।

প্রাণী গবেষকরা জানান, মেছোবাঘ শক্তিশালী এবং দক্ষ শিকারি, লড়াকুও বটে। গাছে চড়তেও ওস্তাদ প্রাণীটি রাতে গাছে থাকা বড় পাখিসহ ডিম-ছানা খায় এরা। কাঠবিড়ালি, তক্ষক, এমনকি শজারু শিকারে অতি দক্ষ এরা। অনেকক্ষেত্রে কুকুরও এদের সঙ্গে লড়াইয়ে হার মানে। মেছো বাঘ বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়।