সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং প্রতিবেশের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করাসহ পৃথিবীতে মানুষসহ প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে পাখিরা। পরাগায়ণ, কৃষি, অর্থনীতিসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে পাখিদের অবদান। এই পাখিরাই ময়লা-আবর্জনার দূষণ থেকে রক্ষা করে পরিবেশকে রাখে নির্মল ও সুন্দর। ভুবন চিল বা ব্ল্যাক কাইটস/Black kite তেমনেই একটি পাখি।
শিকারি পাখি পরিবারে অন্তর্ভুক্ত ভুবন চিল, এদের বৈজ্ঞানিক নাম- মিলভিউস মিগ্র্যান্স/Milvus migrans এবং একটি দিবাচর শিকারি পাখি। বাংলাদেশের সব জায়গায় দেখা মেলে এই পাখিটি। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। সাধারণত ময়লা আবর্জনা থেকে খাবার সংগ্রহ করে, আবার শিকারও করে থাকে ভুবন চিল।
বাংলাদেশের তুলনামূলক বড় আকারের পাখি ভুবন চিল। এরা উড়ন্ত অবস্থায় শিকারকে খেতেও পারে। এ দেশের আবাসিক পাখি এই চিল। পর্বত, নদীর পাড়, বেলাভূমি নগর, শহর ও গ্রামে বিচরণ করে। এরা সচরাচর ছোট দলে লোকালয়ে থাকে। ভারত, ভূটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়ায় বিচরণ রয়েছে এই চিলের।
ঢাকা শহরের পাখিদের একটি বড় অংশই চিল। ২০২১ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক গবেষণায় দেখা যায়, এই শহরের বিভিন্ন অংশে সারাদিন ময়লা-আবর্জনা খেয়ে থাকে এই চিলগুলো। ঢাকা শহরের মধ্যে বর্তমানে সবুজ গাছপালায় বিশেষ করে বড় গাছপালার সংখ্যা দ্রুতই কমে যাচ্ছে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক, সোহরওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ কিছু এলাকায় এখনও টিকে আছে বড় কিছু গাছ। আর এই গাছগুলো এখনও দেশি পাখিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। বড় গাছগুলোতে আবাস গড়ছে কাক, চিল, টিয়া ও ময়নাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এই নগরের পরিবেশ ও প্রতিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে পাখিগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, ফুলার রোড, কার্জন হলসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ভুবন চিলের বেশ বড় কলোনী। সেগুলোর প্রতিটিতে ১০০-১৬০টি চিলের বসবাস, রাতেও সেগুলোতেই অবস্থান করে। দিনে শহরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঘুরে ময়লা খেয়ে শহরকে রাখে পরিস্কার।
সম্প্রতি বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। যার প্রভাব পড়েছে ঢাকা শহরেও। আর ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ঢাকা শহরেরর পাখ পাখালিদের শেষ আবাসস্থল অনেক গাছ। আহত হয়েছে অনেক পাখ-পাখালী। এদের মধ্যে ছিলো ভুবন চিলও। ঝড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয় প্রায় তিন শতাধিক চিল।
সময় বদলাচ্ছে, মানুষও বুঝছে শহরে পাখির গুরুত্ব। তাই তো মানুষের ভালোবাসায় আহত চিল উদ্ধার হয়, যেগুলোকে সেবা ও পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করে ছেড়ে দেয় হয় মুক্ত আকাশে।
চিলগুলো উদ্ধারে এগিয়ে আসে পরিবেশবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, নার্সসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সহায়তায়ও উল্লেখ করার মতো। প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি এই ভালোবাসা অপূর্ব এক দৃষ্টান্ত। এভাবেই টিকে থাকুক প্রাণের প্রতি প্রাণের ভালোবাসায় প্রতিটি জীবনের স্পন্দন।